Monday, January 10, 2011

কেঁচো কম্পোস্ট বদলে দিয়েছে সোনাভানের জীবন

কেঁচো কম্পোস্ট বদলে দিয়েছে সোনাভানের জীবন কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধিঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার দাপনা গ্রামের কৃষাণী সোনাভান এখন আর জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। নিজের বাড়িতে তৈরি কেঁচো কম্পোস্ট সার বদলে দিয়েছে তার ভাগ্য। কমেছে উৎপাদন খরচ, বেড়েছে ফলন।
দাপনা গ্রামের দরিদ্র পরিবারের গৃহবধূ সোনাভান। এক ছেলে, দুই মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার। বড়ছেলেটি ভ্যানচালক। বড়মেয়েটি অষ্টম আর ছোটমেয়েটি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। স্বামী মশিয়ার রহমান পেশায় দিনমজুর। পরের খেতে মজুরির কাজ করেন। কোনো দিন কাজ হয় আবার কোনো দিন হয় না। এভাবেই তারা খেয়ে না খেয়ে এক বিঘা তিন কাঠা জমি কিনেছেন। এ ছাড়াও স্বামী-স্ত্রী মিলে কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে আরো এক বিঘা পরের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করছেন। সোনাভান এক বছর আগেও জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে চাষাবাদ করতেন। এতে তিনি জমি থেকে পর্যাপ্ত ফসল পেতেন না। অন্যদিকে জমির উর্বরাশক্তি নষ্ট হতো এবং প্রচুর পরিমাণে সার দেওয়ায় খরচ বেড়ে যেত।
সোনাভান জানান, এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে প্রায় দুই হাজার টাকা রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হতো। একপর্যায়ে তিনি জানতে পারেন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড অর্গানিক পদ্ধতিতে রাসায়নিক সার ছাড়াই চাষাবাদ করার জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এর পর সোনাভান হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড থেকে কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি করার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং সংস্থার পক্ষ থেকে তাকে কম্পোস্ট প্লান্ট তৈরি করার জন্য এক হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। ওই টাকা দিয়ে ২০০৮ সালে তিনি নিজ বাড়িতে দুই চেম্বারবিশিষ্ট একটি কম্পোস্ট প্লান্ট স্থাপন করেন। প্রথম তিন মাসে প্রায় ২০ মণ কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে তা দিয়ে সোনাভান এক বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক ধান চাষ করেন। তিনি জানান, গ্রামের অনেক চাষি তার এ পরীক্ষামূলক খামারে কেঁচো কম্পোস্ট সারের পরিবর্তে রাসায়নিক সার ব্যবহার করার পরামর্শ দিতেন। কিন্তু তাদের কথায় কান না দিয়ে নিজের প্রচেষ্টায় উৎপাদিত কম্পোস্ট সার দিয়ে ধান চাষ করে ওই জমিতে প্রায় ২০ মণ মিনিকেট ধান পান। এ চাষে তার খরচ হয় মাত্র ৭৫০ টাকা। এ ছাড়া জমিতে আগাছা নিধন, ধান কাটা, বাঁধার সব কাজ করেছেন স্বামী-স্ত্রী দুজনে। বর্তমানে সোনাভান ও স্বামী মশিয়ার পরের এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে সবজির লাউখেত এবং অপর এক বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছেন। এসব খেতে তিনি তারই উৎপাদিত কেঁচো কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করে ফসল উৎপাদন করছেন।
সোনাভানের দেখাদেখি দাপনা এলাকার অনেক কৃষক-কৃষাণী অর্গানিক পদ্ধতিতে রাসায়নিক সার বাদে চাষাবাদ করার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। অনেকে বাড়িতে ছোট ছোট কম্পোস্ট প্লান্ট স্থাপন করে সার উৎপাদন করছেন।
কেঁচো বিষয়ে সোনাভান জানান, একটি সাধারণ কম্পোস্ট প্লান্ট তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় এক হাজার টাকা। এ সার তৈরি করতে লাগে গরুর গোবর, কেঁচো আর পচা কলাগাছ। বর্তমানে সোনাভান এলাকার অনেক কৃষকের কাছে ১০ টাকা কেজি হারে কম্পোস্ট সার ও ৪০০ টাকা কেজি কেঁচো বিক্রি করছেন। দূরদূরান্ত থেকে অনেক কৃষক এসে সোনাভান ও মশিয়ার রহমানকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি করাচ্ছেন। তাদের এ চাষাবাদে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। রাসায়নিক সার ছাড়াই বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা যে সম্ভব তার দৃষ্টান্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলের হতদরিদ্র কৃষাণী সোনাভান।
Source: Bangladesh Pratidin, 03 July-2010

No comments:

Post a Comment